বৃহস্পতিবার, ০৬ মার্চ ২০২৫, ০৪:২৩ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ ভূয়া ডিসিআর দেখিয়ে অন্যের জমি অবৈধভাবে ইজারা প্রদানের অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উচ্চমান সহকারী (বড় বাবু) রাসেল ইকবালের বিরুদ্ধে। তিনি কর্তৃপক্ষের অগোচরে মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে এক জনের জমি অন্যের কাছে ইজারা দিচ্ছেন। দীর্ঘ দিন ধরে চলে আসা তারা এ দুর্নীতি অবশেষে প্রকাশে চলে এসেছে।
ভূয়া ডিসিআর দেখিয়ে জমির দখল বুঝিয়ে দিতে গিয়ে ধরা পড়েছেন তিনি। দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ থাকার পরে পুলিশের সহায়তায় রক্ষা পেয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় (পর্যবেক্ষণ ও রক্ষণাবেক্ষণ বিভাগ) এর বড় বাবু রাসেল ইকবাল।
যদিও তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রাসেল ইকবাল। তার দাবি তিনি তার আত্মিয়ের সমস্যা সমাধানের জন্য সেখানে যান। তবে সেখানে তার সাথে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের একাধিক সূত্রে জানাগেছে, ‘পানি উন্নয়ন বোর্ডের জমি ইজারা পেতে নিয়ম অনুযায়ী আবেদন করতে হয়। এর পরে সার্ভেয়ারের মাধ্যমে আবেদনের বিষয়টি তদন্ত বা জরিপ শেষে ব্যবস্থা গ্রহন করে থাকেন নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সংশ্লিষ্ট কমিটি। কিন্তু বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডে ঘটছে ভিন্নটা। ক্ষমতার দাপটে সার্ভেয়ারকে বস করে রেখেছেন উচ্চমান সহকারী রাসেল ইকবাল। তিনি নিজেই জমি’র ইজারা সম্পর্কিত সকল কার্যক্রম সম্পাদন করে আসছেন।
সূত্রগুলো আরো জানায়, যারা ইজারার আবেদন নিয়ে আসছে তাদের ইজারা বন্দবস্ত করে দেয়ার নাম করে আবেদন প্রতি আদায় করে নিচ্ছেন ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত। পরবর্তীতে ভূয়া ডিসিআর এবং জাল কাগজপত্র তৈরী করে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে সরকারি জমির ইজারা নিজে উপস্থিত থেকে বুঝিয়ে দিচ্ছেন। বিনিময়ে পাচ্ছেন ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত।
এমনই এক জাল জালিয়াতির পুনরাবৃতি করতে গিয়ে গত শুক্রবার বাবুগঞ্জ উপজেলার বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের সরিকল এলাকাধীন তীলের চরে স্থানীয়দের রোশানলে বড়তে হয় তাকে। এমনকি দুপুর থেকে রাত পর্যন্ত দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ রেখে লাঞ্ছিত করা হয় বড় বাবু রাসেল ইকবালকে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও বীরশ্রেষ্ঠ জাহাঙ্গীর নগর ইউনিয়নের ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান রিপন জানান, ‘তীলের চর বাজার সংলগ্নে তার কিছু পরিমান জমি রয়েছে। সম্প্রতি ওই জমি পানি উন্নয়ন বোর্ডের সম্পত্তি বলে দাবি করা হয়। এর প্রেক্ষিতে শুক্রবার বেলা ১২টার দিকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী রাসেল ইকবাল সেখানকার ১০৪ ফুট জমি মশিউর রহমান ইউনুস মোল্লা নামের এক ব্যক্তিকে দখল বুঝিয়ে দিতে যান।
ইউপি সদস্য রিপন বলেন, ‘জমি দখল বুঝিয়ে দিতে গেলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বড় বাবুর কাছে ইজারা চুক্তি সম্পাদনের পাকা দলিল দেখতে চাওয়া হয়। তখন রাসেল ইকবাল একটি ডিসিআর ফরম বের করে দেন। সেখানে দেখা যায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের একটি গোল সিল থাকলেও তাতে কোন স্মারক নম্বর নেই। নেউ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের স্বাক্ষ্যর। ফলে সেখানেই রাসেলের অনিয়ম এবং দুর্নীতি ধরা পড়ে যায়। এ জন্য স্থানীয় বিক্ষুব্ধ জনতা তাকে ঘিরে ফেলে অবরুদ্ধ করে রাখে। দীর্ঘ সময় অবরুদ্ধ থাকার পরে সন্ধ্যার দিকে বাবুগঞ্জ থানা পুলিশের সহযোগিতায় ছাড়া পায়।
রিপন মেম্বর অভিযোগ করেন, ‘রাসেল ইকবাল ইজারার নামে ওই জমি পায়িয়ে নেয়ার জন্য মশিউর রহমান ইউনুস মোল্লার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা উৎকোচ গ্রেহন করেছে বলে শুনেছি। একইভাবে তিনি বাবুগঞ্জের ওই এলাকার নিজাম উদ্দিন, আনিসুর রহমান মোশারেফ, সাইদুল খান, শাহে আলম মাতুব্বর, লিটন সরদার, হাসান ভান্ডারি, কালাম মোল্লাসহ একাধিক ব্যক্তিকে ভূয়া কাগজপত্র দেখিয়ে সরকারি জমি ইজারা দিয়েছেন বলে অবিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে তাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী’র কার্যালয়ের উচ্চমান সহকারী (বড় বাবু) রাসেল ইকবাল পুরো ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, ওই এলাকার আমার এক আত্মিয় রয়েছে। তার সমস্যা সমাধানের জন্য আমি গিয়েছিলাম। আমি কাউকে কোন জমির ইজারা দেইনি।
তবে তিনি এমনটি দাবি করলেও পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে ম্যানেক করতে মরিয়া হয়ে উঠেন। একাধিকবার ফোন করে চায়ের দাওয়াত এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাবেক এক আলোচিত কর্মচারীর সাথে কথা বলার জন্য ফোন ধরিয়ে দেন। সর্বশেষ নিউজ থামাতে রাতে পত্রিকা অফিসে এসে সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে ঘুষ দেয়ার চেষ্টা করেন পাউবো’র উচ্চ মান সহকারী রাসেল ইকবাল।
Leave a Reply